গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেলায়েত শেখের বয়স ৫৫ বছর। রয়েছে তিন সন্তান। ছোট ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। বাকি এক ছেলে ও এক মেয়ে স্নাতকে পড়ছেন কলেজে। তবে  এই পৌঢ় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। বুঝিয়ে দিলেন পড়াশোনার কোনও বয়স হয় না। ছোট ছেলের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার বছরে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন বাবা বেলায়েত।

রাজধানীর একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষার আবেদন করেছেন। আগামী ১১ জুন ‘ঘ’ ভর্তি পরীক্ষা দেবেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ মে) রাতে বেলায়েত  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বেলায়েতের শৈশব কাটে অভাব-অনটনে। পরিবারের অভাব-অনটনের মধ্যেও চালিয়ে যান পড়াশোনা। বেলায়েত বলেন, পরিবারে ছিল অভাব। লেখাপড়ার খরচ ঠিক মতো দিতে পারতো না। ১৯৮৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। তখন ফরম ফিলাপের জন্য যে টাকা ছিল তা দিয়ে বাবার চিকিৎসা করাতে হয়েছিল। এরপর আবার প্রস্তুতি। ১৯৮৮ সালে ফের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া কথা থাকলে সেবছর বন্যার কারণে বসা হয়নি মাধ্যমিকের এই পরীক্ষা। পরে ১৯৯০-৯২ সালের দিকে আবারও প্রস্তুতি নেওয়া হলেও মায়ের অসুস্থতার জন্য আর সম্ভব হয়নি। এসময় সংসারের হাল ধরেন বেলায়েত।

বেলায়েতের তিন সন্তান। বড় ছেলে এলাকার একটি কলেজের স্নাতকে পড়ছেন। মেয়েকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ানো স্বপ্ন ছিল তার। এজন্য রাজধানীর একটি কলেজে ভর্তি করান। কিন্তু সে পড়াশোনা শেষ না করেই গ্রামে চলে যায়। সেখানে এইচএসসি শেষে একটি কলেজের স্নাতকের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়।

ছোট ছেলে এবার এসএসসি দিয়েছে। তবে দুই বছর আগে বেলায়েত নিজেই এসএসসি সম্পন্ন করেন রাজধানীর বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে। তিনি জানান, রামপুরার মহানগর কারিগরি কলেজ থেকে এসএসসি পড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে আসন ছিল না। তাই বাসাবো বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে এসএসসি শেষ করে এবার মহানগর কারিগরি কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করি।

পরীক্ষার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শ্রীপুরের মাওনানে একটি কোচিংয়ে ভর্তির পাশাপাশি প্রস্তুতিও নিচ্ছি। ৫৫ বছর বয়সে আগামী ১১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিবো। আল্লাহর কাছে সাহায্য ও সকলের কাছে দোয়া চাই।